ফার্স্ট কাজিন (চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো) বোন বিবাহ করা জায়েজ কি না

👩‍ইমানদারদের জন্য ফার্স্ট কাজিন (চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো) বোন বিবাহ করা জায়েজ কি না সে প্রসংগে আলোচনা:

আসুন দেখে নেই ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ কাদেরকে বিয়ে করা হারাম করেছেন।

وَلاَ تَنكِحُواْ مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاء سَبِيلاً

(৪:২২)। যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا

(৪:২৩)। তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, কন্যা,  বোন, ফুফু,  খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা, দুধ-মাতা,  দুধ-বোন, তোমাদের শাশুড়ী, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু।

আয়াত দুটি লক্ষ্য করুন।
আয়াত দুটিতে মোট ১৪ প্রকার সম্পর্কের নারীকে বিবাহ করা ঈমানদারদের জন্য হারাম করা হয়েছে। অতঃপর বলা হয়েছে পূর্বে যা হয়েছে হয়েছে। অর্থাৎ পূর্বে যা কিছু ব্যাতিক্রম ছিল তা বাতিল করে এই বিধান দেওয়া হলো।

এবার পরের আয়াতটি লক্ষ্য করুন।

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاء ذَلِكُمْ أَن تَبْتَغُواْ بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

(৪:২৪)। এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকার ভুক্ত দাসী ব্যাতিত সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ। এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর বিধান (লিখিত)। উল্লেখিত নারীগণ ব্যাতীত, তোমাদের জন্যে সকল নারী হালাল করা হয়েছে, উদ্দেশ্য এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবে, ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(৪:২৪) আয়াতটি লক্ষ্য করুন। এই আয়াতে আরও একটি ক্যাটাগরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা হলো অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতীত সকল সধবা নারী(যাদের স্বামী আছে)। অতঃপর পূর্বের আয়াত দুইটি সহ যাদেরকে  বিবাহ করা হারাম করা হইয়াছে তারা বাদে বাকি সব নারীকে অর্থের(মাহরের) বিনিময়ে বিবাহ করা হালাল করা হয়েছে।

👩‍তাহলে ৪:২২, ৪:২৩ ও ৪:২৪ আয়াত অনুযায়ী চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন ও খালাতো বোন বিবাহ করা বৈধ। যেহেতু নিষিদ্ধ তালিকায় তারা নেই।

এবার আসুন দেখাযাক ৩৩:৫০ আয়াত দেখিয়ে যারা বলছে যে, চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন ও খালাতো বোন বিবাহ করা শুধুমাত্র রাসূলের জন্য বৈধ ছিল, অন্য মুমিনদের জন্য নয়।

আসুন দেখি তাদের এই কথা ৩৩:৫০ আয়াত সমর্থন করে, নাকি করে না।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاء اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

(৩৩:৫০(। হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি। (তন্মধ্যে) যাদেরকে আপনি  অর্থ (মাহর) প্রদান করেছেন, আর দাসীদেরকে, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দিয়েছেন এবং আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে, আর কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করেছে আর নবীও যদি তাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছে।(উল্লেখিত নারী গণ) মুমিনগণ ব্যাতীত শুধুমাত্র আপনারই জন্য। আমার অবশ্যই জানা আছে, তাদের (ঈমানদারদের) স্ত্রী ও দাসীদের মধ্য থেকে যাকিছু তাদের উপর ফরয করেছি। যেন (ভবিষ্যতে) আপনার উপরে না আসে কোনো বিরূপ পরিস্থিতি।আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।

আমি আয়তটির word to word/ শাব্দিক অনুবাদ দিয়েছি। প্রয়োজনে আরবির সাথে মিলিয়ে দেখেন।

লক্ষ্য করুন আয়াতটিতে যে সকল verb ব্যবহার করা হয়েছে তা অতীতকাল। অর্থাৎ আয়াতে উল্লেখিত নারীগণকে রাসূল ভবিষ্যতে বিবাহ করবেন তা বোঝানো হচ্ছে না। বরং রাসূল ইতোমধ্যে যাদেরকে বিয়ে করেছেন তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে। আর আয়াতটির শেষ অংশে আল্লাহ বলেন যে,তিনি ঈমানদারদের জন্য কি ব্যবস্থা রেখেছেন তা তিনি ভুলে যান নি।
আয়াতটিতে যা বলা হয়েছে:

১। আপনার জন্য হালাল করা হয়েছে আপনার স্ত্রী
গণকে। আয়াতে এর পরে যত নারীর কথাই এসেছে, তাদের সবাই রাসূলের স্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত।
তার প্রমাণ ৩৩:৫১ ও ৩৩:৫২ আয়াত দ্বয়। ৩৩:৫১ ও ৩৩:৫২ আয়াত দ্বয় ৩৩:৫১ আয়াতের ব্যাখ্যা।

৩৩:৫১ আয়াতে সেই সকল নারীদের সাথে যৌন সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে, যাদের বর্ণনা ৩৩:৫০  আয়াতে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৩৩:৫০ আয়াতে উল্লেখিত নারীগণ রাসূলের স্ত্রী, যাদের সাথে যৌন সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে। আর রাসূল নিশ্চয়ই স্ত্রী গণ ব্যাতীত অন্য কারো সাথে যৌন সম্পর্ক করেন নাই।
এবং ৩৩:৫২ আয়াতে   আল্লাহ বলেন, ইহার পর অর্থাৎ (৩৩:৫০) আয়াতে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তারা ব্যাতীত আর কোনো নারী রাসূলের জন্য হালাল নয়। এবং নিজের স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য নারীকে স্ত্রী গ্রহণ করাও  হালাল নয়। অর্থাৎ নিজ স্ত্রীদের মধ্যে কারো সাথে সম্পর্ক ছেদ করে অন্য কোনো নারীকে বিবাহ করাও হালাল নয়, যদিও তাদের সৌন্দর্য্য রাসূলকে মুগ্ধ করে। আয়াত দুইটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন,ও বোঝার চেষ্টা করুন।

২। এর পরে "খালিসাতাল্লাকা" শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, পূর্বে বর্ণিত সকল নারীগণ যাদেরকে রাসূল স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেছেন তারা শুধুমাত্র তারই জন্য খাস, মুমিনদের জন্য নয়। অর্থাৎ রাসূলের স্ত্রীগণ মুমিনদের জন্য হারাম।

আর এই সূরার ৩৩:৫৩আয়াতের শেষ অংশে তাই বলা হচ্ছে। "আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।"

এখানে ৩৩:৫১ ও ৩৩:৫২ আয়াত দুটিও পাঠকের বোঝার সুবিদার্থে উল্লেখ করা হলো।

تُرْجِي مَن تَشَاء مِنْهُنَّ وَتُؤْوِي إِلَيْكَ مَن تَشَاء وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكَ ذَلِكَ أَدْنَى أَن تَقَرَّ أَعْيُنُهُنَّ وَلَا يَحْزَنَّ وَيَرْضَيْنَ بِمَا آتَيْتَهُنَّ كُلُّهُنَّ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي قُلُوبِكُمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَلِيمًا

(৩৩:৫১)। আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা কাছে রাখতে পারেন। আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে তাতে আপনার কোন দোষ নেই। এতে অধিক সম্ভাবনা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে; তারা দুঃখ পাবে না এবং আপনি যা দেন, তাতে তারা সকলেই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে, আল্লাহ জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।

لَا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاء مِن بَعْدُ وَلَا أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا

(৩৩:৫২)। এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।

অতএব ৩৩:৫০ আয়াতে উল্লেখিত "খালিসাতাল্লাকা" শব্দটি দ্বারা পূর্বে উল্লেখিত নারীগণ বিবাহের বিধানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসূলের জন্য হালাল আর মুমিনদের জন্য হারাম, তা বুঝায় নাই। বরং এটা বুঝিয়েছে যে পূর্বে উল্লেখিত নারীগণ যাদেরকে রাসূল স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা মুমিনদের জন্য হারাম। যা ৩৩:৫৩ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূরার ৩১থেকে ৫৩ আয়াত পর্যন্ত সকলকে মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।

৩৩:৫০ আয়াতের বিধানের সাথে ঈমানদারদের বিবাহ সংক্রান্ত বিধানের কোনো সম্পর্ক নাই। আর তাই মহান রব আল্লাহ ৩৩:৫০ আয়াতের শেষে ঈমানদারদের জন্য তিনি  কি নির্ধারন করেছেন, তা তিনি জানেন বলে উল্লেখ করেছেন। ঈমানদারদের বিবাহ সংক্রান্ত বিধান ৪:২২, ৪:২৩ ও ৪:২৪ আয়াতে প্রদান করা হয়েছে।

হে আমাদের রব! আমাদের পাপ ও সীমালংঘন ক্ষমা করুন। আমাদের অজ্ঞতা দূর করে দিন।
আর আপনার জমিনে আপনার সার্বভৌমত্ত্ব ও দীন প্রতিষ্ঠিত করে দিন, আর আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন। যাতে আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদাত (শিরিক মুক্ত) করতে পারি। নিশ্চয়ই আপনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।
.
By Masud Ranabd

Comments